নারিকেল গাছে সার প্রয়োগের সঠিক সময় ও নিয়ম

যেকোন বয়সের নারিকেল গাছের জন্যে দুই কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তিতে নিচের উল্লেখিত সারের অর্ধেক পরিমাণ বৈশাখ- জৌষ্ঠ মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকি অর্ধেক সার আশ্বিন মাসে গাছের গোড়া থেকে দূরে চতুর্দিকে ১ মিটার বাদ দিয়ে ১.০-২.৫ মিটার দূর পর্যন্ত মাটিতে ২০-৩০ সে.মি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় মাটিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। বেশি শুষ্কতা ও বেশি বৃষ্টিপাতের সময় সার প্রয়োগ করা ঠিক হবেনা ।
গাছ লাগানোর পর প্রতি বছর নিম্ন লিখিত হারে সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
১-৪ বছর বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ১০ কেজি
- ইউরিয়াঃ ২০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ১০০ গ্রাম
- এমওপিঃ ৪০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ১০০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ৪০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ১০ গ্রাম
৫-৭ বছর বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ১৫ কেজি
- ইউরিয়াঃ ৪০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ২০০ গ্রাম
- এমওপিঃ ৮০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ২০০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ৬০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ১৫ গ্রাম
৮-১০ বছর বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ২০ কেজি
- ইউরিয়াঃ ৮০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ৪০০ গ্রাম
- এমওপিঃ ১৫০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ২৫০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ৮০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ২০ গ্রাম
১১-১৫ বছর বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ২৫ কেজি
- ইউরিয়াঃ ১০০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ৫০০ গ্রাম
- এমওপিঃ ২০০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ৩৫০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ১০০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ৩০ গ্রাম
১৬-২০ বছর বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ৩০ কেজি
- ইউরিয়াঃ ১২০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ৬০০ গ্রাম
- এমওপিঃ ২৫০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ৪০০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ১৫০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ৪০ গ্রাম
২০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতিটি নারিকেল গাছের জন্য যেসকল সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
- গোবর সারঃ ৪০ কেজি
- ইউরিয়াঃ ১৫০০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ৭৫০ গ্রাম
- এমওপিঃ ৩০০০ গ্রাম
- জিপসামঃ ৫০০ গ্রাম
- জিংক সালফেটঃ ২০০ গ্রাম
- বোরিক এসিডঃ ৫০ গ্রাম
জেনে রাখা ভালোঃ
- একটা সুস্থ নারিকেল গাছের পাতা লম্বায় জাত ভেদে ২.৫-৩.৫ মিটার হতে পারে। সুস্থ, সবল একটা গাছের পাতার সংখ্যা ৩২-৪০টা।
- পাতাগুলো যত উপরমুখী হবে এবং সংখ্যায় তা যত বেশি হবে, গাছ সাধারণত তত বেশি ফুল-ফল দানে সক্ষম হবে।
- ভালো যত্ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় কান্ড থেকে প্রতি মাসে একটা করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পাতা বের হয় এবং সে পাতার গোড়ালি থেকে বয়স্ক গাছে ফুল-ফলের কাঁদি বের হয়।
- নারিকেল গাছের ডালা কখনোই কাটা যাবে না। এ পাতা হলুদ হয়ে শুকানোর আগ পর্যন্ত কোনো মতেই কেটে ফেলা যাবে না। এ গাছ ঠিক কলা গাছের মতো ‘রুয়ে কলা না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’ খনার বচনটা এ গাছের জন্য একেবারে প্রযোজ্য।
- যেহেতু একটা সুস্থ গাছে প্রতি মাসে একটা করে পাতা বের হয় এবং তা প্রায় তিন বছরের মতো বাঁচে সে হিসাব করলে একটা ফলন্ত, সুস্থ, সবল গাছে ৩২-৪০টা পাতা থাকার কথা। গাছে এ সংখ্যা ২৫ টার নিচে থাকলে ধরে নিতে হবে গাছটা খাবার ও যত্নের অভাবে বড় কষ্টে আছে। পাতার সংখ্যা ২০ টার নিচে নেমে গেলে গাছে ফুল ফল ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে যাবে।